মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম দিন টিকা নিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন

প্রথম দিন টিকা নিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন

স্বদেশ ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা প্রয়োগের প্রথম দিন সারাদেশে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছেন ঢাকা মহানগরে; পাঁচ হাজার ৭১ জন। সবচেয়ে কম নিয়েছেন বরগুনায়; ৭৮ জন। তবে টিকা নেয়াদের মধ্যে ২১ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শতকরা হিসেবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.০৬৭ শতাংশ। যা যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেই এক স্বাভাবিক চিত্র।

রোববার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে। টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ৩১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের মধ্যে টিকা নিয়েছে পাঁচ হাজার ৭১ জন। এই বিভাগে যারা টিকা নিয়েছেন; তাদের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ২১ জন, নারী দুই হাজার ২৯৩ জন। এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদের সাত জন রাজধানী ঢাকার।

চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে ছয় হাজার ৪৪৩ জনকে; এর মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৯৪৪ ও নারী এক হাজার ৪৯৯ জন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

রাজশাহী বিভাগে টিকা নিয়েছেন তিন হাজার ৭৫৭ জন; এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৯০৯ ও নারী ৮৪৮ জন। এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে চার জনের। খুলনা বিভাগে তিন হাজার ২৩৩ জনকে টিকা দেয়া হয়; এদের দুই হাজার ৪৬৩ জন পুরুষ, নারী ৭৭০ জন। এই বিভাগে একজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

বরিশাল বিভাগে টিকা নিয়েছেন এক হাজার ৪১২ জন; পুরুষ এক হাজার ১২৩, নারী ২৮৯। এই বিভাগে কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সিলেট বিভাগে টিকা দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩৯৬ জনকে; এদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৭৪৭, নারী ৬৪৯। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এক জনের।

এদিকে, ময়মনসিংহ বিভাগে টিকা দেয়া হয় এক হাজার ৯৯৩ জনকে; এদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৩৭২ জন ও নারী ৩২১ জন। এই বিভাগে কারো মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। রংপুর বিভাগে টিকা পেয়েছেন দুই হাজার ৯১২ জন; এদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ২৭৮ জন, নারী ৬৩৪ জন। এই বিভাগেও কারো মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সব টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। করোনা টিকা নেওয়ার পর যাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, সেগুলো তেমন কিছু নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে টিকা দেয়ার স্থান লাল হয়ে গেছে। সামান্য জ্বর এসেছে কারও। একটু ব্যথা করছে- এমন তথ্য এসেছে।’

শুরুর দিন তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি রেখেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারা দেশে দুই হাজার ৪০০টি দল টিকা প্রয়োগে কাজ করেছে। টিকা নেওয়ার জন্য আগে থেকে নিবন্ধন করতে হয়েছিল তাদের। এছাড়া টিকাদানকেন্দ্রেও নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। প্রথম দিন টিকা দেয়ার সময় গ্রহীতাকে বলে দেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ।

এর আগে, সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পর ইতোমধ্যেই টিকা নিয়েছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিব।

বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তারা করোনার টিকা নিয়েছেন। বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড নামে টিকাটি। ভারত থেকে আনা এই ভ্যাকসিন ঘিরে বাংলাদেশে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। এর জেরে টিকা নিতে মানুষের মাঝে কাঙ্ক্ষিত সাড়াও দেখা যায়নি বলে অনেকে মনে করেন।

রোববার মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন তিনি। টিকা নেয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘টিকা নেয়ার পর আরো শক্তিশালী হয়ে গেছি। কোনো ধরনের সমস্যা বোধ করছি না’।

একই হাসপাতালে টিকা নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি টিকা নেন। এ সময় গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে জনগণকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সস্ত্রীক টিকা নেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। টিকা নেয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি টিকা নিয়েছি, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই’। সবাইকে টিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেন তিনি।

দুপুর ১টায় সচিবালয়ে ‘সচিবালয় ক্লিনিক’-এ টিকা নেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। টিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনুভূতি অন্যান্য টিকার মতোই। সকল পর্যায়ে টিকাদান ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক। মন্ত্রী-এমপিরা অনেকেই টিকা নিচ্ছেন, অপপ্রচারকারীরা ব্যর্থ হয়েছে।’ জনগণকে নির্দ্বিধায় টিকা নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

বেলা পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যেকোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে এ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। কোনোরকম সমস্যা অনুভব করিনি।’

এদিকে, সচিবদের মধ্যে প্রথম ধাপেই টিকা নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নেন তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877